শুদ্ধশব্দ

শুদ্ধশব্দ একটি বাংলা স্পেলচেকার। এটি ডেভালপ করা হয়েছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড অ্যাড-ইন হিসেবে। এর শব্দভাণ্ডারে রয়েছে ১, ০৬, ০০০ এরও বেশি শব্দ যা সম্পূর্ণ আধুনিক বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে প্রণীত । স্পেলচেকারটি এই স্বল্প পরিমান শব্দ দিয়েই বাংলায় সম্ভব এমন কয়েকশো কোটি শব্দ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করতে পারে। ভুল হিসেবে চিহ্নিত শব্দর সম্ভাব্য সঠিক শব্দের পরামর্শ তালিকা তৈরি করতে স্পেলচেকারটি ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, শব্দের সম্পাদনার দূরত্ব, ব্যবহারকৃত কিবোর্ড এবং ব্যাকরণসহ আরও অনেক বিষয়াদি বিবেচনা করে। পরামর্শের তালিকা প্রণয়নের পর সেগুলিকে আবার নৈকট্যের মাত্রা অনুসারে সাজায়। পরামর্শ তালিকা সাধারণত যথা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা হয়।

রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০১০

বাংলা বানান পরীক্ষণ প্রদর্শনী ভিডিয়ো

বাংলা বানান শুদ্ধ করার জন্য যারা স্পেল চেকার ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য এই ভিডিয়ো ডেমোটি দেওয়া হল। যারা সফট্‌ওয়্যারটি ইনস্টল করার পর বুঝতে পারছেন না কীভাবে-এর ব্যবহার শুরু করবেন তারাও এই ভিডিয়োটি দেখতে পারেন। এখানে আপনি দেখতে পাবেন, শুদ্ধশব্দ কীভাবে এমএস ওয়ার্ডের(MS-Word)ভেতর বাংলা টেক্সট-এর বানান পরীক্ষা করছে এবং ভুল বানানের জন্য পরামর্শ প্রদান করছে।

পাঠক অবশ্যই আপনার মন্তব্য করতে ভুলে যাবেন না।

কীভাবে শুদ্ধশব্দ বাংলা স্পেল চেকার ডাউনলোড ও ইনস্টল করবেন

অনেক ব্যবহারকারীই আছেন যাদের নতুন সফট্‌ওয়্যার সংগ্রহ ও ইনস্টল করবেন কীভাবে তা ভালো ভাবে জানা নেই। তাদের জন্যই এই পোস্টটি লেখা।

শুদ্ধশব্দ ডাউনলোড (Shuddhoshabdo Download):
শুদ্ধশব্দ ডাউনলোড(Download) করার জন্য বর্তমানে sourceforge.net এ হোস্ট করা আছে। ডাউনলোড(Download) লিংকটি ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে এই সাইটের ডানের ফ্রেমে দেওয়া আছে। আপনি লিংকটিতে ক্লিক করার সাথে সাথে ডাউনলোড(Download) করার জন্য sourceforge.net এ রিডাইরেক্ট হয়ে যাবেন। শুদ্ধশব্দর সর্বশেষ ভার্সনটি এখানে shuddhoshabdo.zip নামে থাকবে। ফাইলটি ডাউনলোড করুন।

শুদ্ধশব্দ ইনস্টলেশন(Shuddhoshabdo installation):
shuddhoshabdo.zip আপনি ফাইলটি ডাউনলোড করে অবশ্যই এক্সট্রাক্ট(extract) করে নেবেন। এক্সট্রাক্ট করা ফোল্ডারে দেখবেন shuddhoshabdo.exe নামে ইনস্টলেশন ফাইলটি আছে। আপনি ডাবল ক্লিক করে ইনস্টলেশন ফাইলটি চালু করে এর দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে ইনস্টলেশন সম্পূর্ণ করুন।


প্রক্রিয়াটি আরও পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য প্রয়োজনে ভিডিয়োটি দেখুন।
শেষে মনে করিয়ে দিচ্ছি, আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও ব্যবহার অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাবেন না!

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০১০

বাংলা বানান শৃঙ্খলা প্রদান, বাঙালির কর্তব্য

বাংলা ভাষা নিয়ে প্রত্যেক বাঙালিরই এক ধরনের অহংকার রয়েছে, তার লিপি নিয়ে রয়েছে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বোধ। এই প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করা যায়, বাংলা ভাষার বানান নিয়ে প্রত্যক বাঙালির অহংকার অথবা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বোধের কোনো সুযোগ আছে কী? আমরা যে ভাষাকে এত ভালোবাসি এবং যার জন্য আমাদেরকে রক্তও দিতে হল সেই ভাষার একটি সুসংহত লিখিত রূপ নেই তা কী আমাদের জন্য অহংকারের? আমরা এত বিচিত্র সব বানান লিখি যা আমাদেরকে বিশৃঙ্খল হিসেবেই প্রমাণ করে। এই বিশৃঙ্খলতা আমাদেরকে শুধু হেয় নয় আমাদের জ্ঞান চর্চার পথেও বড় এক বাধা।

বাংলা বানানের বিশৃঙ্খল অবস্থা অবসানের জন্য ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রাজশেখর বসুর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি ১৯৩৬ সালের মে ও অক্টোবর মাসে বানান সম্পর্কিত পুস্তিকার প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ এবং ১৯৩৭ সালে তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। এই প্রচেষ্টা ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষিতে বিপ্লবাত্মক যদিও এর ভূমিকায় উল্লেখ ছিল যে-সমিতি কেবল যে সব বানানে ঐক্য নাই সে সকল বানান যথাসম্ভব নির্দিষ্ট করা এবং যদি সম্ভব হয় তবে কোনো কোনো স্থলে প্রচলিত বানান সংস্কার করা। তারপর সময়ের বিবর্তনে সংহত বানানের জন্য সচেতনতার বৃদ্ধির ফলে বাংলা বানান বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ সুসংহত বানানবিধি প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের বাংলা বানানের খসড়া, বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বাংলা বানানের সমতাবিধান এবং লিখনরীতি ও লিপির সরলীকরণ সুপারিশপত্র এবং শিশু সাহিত্য সংসদ ও সাহিত্য সংসদ প্রকাশন সংস্থার বাংলা বানানবিধি উল্লেখ যোগ্য। বর্তমানে অনেক সংবাদপত্র ও প্রকাশনা সংস্থাকেও নিজস্ব বানানবিধি প্রণয়ন করতে এবং তা তাদের প্রকাশনার জন্য ব্যবহার করতে দেখা যায়। অবশ্য একটি সুসংহত মান্য বানানবিধি অপেক্ষা এত বানানবিধি আমাদের জন্য অকল্যাণকর বটে।

এতগুলি বানানবিধি থাকা সত্ত্বেও বাংলা বানানের অবস্থার খুব উন্নতি ঘটেছে এরকম মন্তব্য করা অনুচিত হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’(ফেব্রুয়ারি ২০০২ সংস্করণ) এর পরিশিষ্টে ছাপানো বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের দু-একটি বিষয় উল্লেখ করতে পারি। এই বানানের নিয়মের ২.০১ অংশে স্পষ্ট বিধান দেওয়া হয়েছে যে-সকল অ-তৎসম শব্দে ই এবং উ এবং এদের কার চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে এবং কেবল কিছু স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার ব্যবহারের ঈষৎ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ মুদ্রিত বানানের নিয়মটির সর্বত্র ‘দেশী’ এবং ‘বিদেশী’ শব্দ দুটিতে এ নিয়মের বিরুদ্ধে ঈ-কার ব্যবহার করা হয়েছে। ৪.০১ অংশে অ-তৎসম শব্দের উদাহরণে লন্ঠন, গুন্ডা, প্যান্ট ইত্যাদি শব্দের সাথে সংস্কৃত ঘণ্টা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই সব প্রমাণ করে বানানের নিয়ম এবং তার সচেতন প্রয়োগের দূরত্ব। এ বিষয়ে পবিত্র সরকারের মন্তব্যটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে “কিন্তু লিখন-সমর্থ আবালবৃদ্ধবনিতাকে দিয়ে সেই সিদ্ধান্তের (বানান বিষয়ক সিদ্ধান্ত) প্রত্যেকটি সূত্র স্বীকার ও পালন করানো, সে প্রায় অসম্ভব কাজ। অন্তত এই অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে আমরা তো সে কাজ করে উঠতে পারলাম না। আরও অর্ধশতাব্দী এরকম প্রায় নিষ্ফলা গেলেও অবাক হবার কিছু নেই। কারণ এ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা বলে, সংস্কারে আমরা যত উৎসাহী সম্প্রসারে ততটা নই। সহজ কাজটা আমরা হট্টগোল করে করি, কঠিন কাজটার বেলায় নিঃশব্দ থাকি।”

বানানবিধিতে বিকল্প বানানের সুযোগ, প্রণীত বানানবিধিগুলির মধ্যে বিরোধ, লেখক, শিক্ষক ও গুরুজনদের এক সময় শেখা বানান নিজেরা না ভোলা এবং অন্যদেরকে ভুলতে না দেওয়া, আমাদের অজ্ঞতা ও নিজ ভাষার বানানের বিষয়ে উদাসীনতা-এই সুযোগে আমাদের বাংলা বানান হয়ে গেছে নিয়মরহিত, বিশৃঙ্খল ও বিভিন্ন রূপী। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় কারণ দুটির ক্ষেত্রে কিছু বলা প্রয়োজন। বানানবিধিগুলিতে যে বিকল্প বানানের কথা বলা হয়েছে তার সংখ্যা খুব বেশি নয় এবং বানানবিধিগুলিতে যে বিরোধ তা সামান্য। কিন্তু দুটি বিষয়ই আমাদের কাছে প্রচুর হিসেবে দেখা দেয় এবং আমরা সেই সুযোগে নিয়ম সম্পর্কে যথেষ্ট না জেনেই নিয়মের দোহাই দিয়ে ভুল করতে থাকি। যেমন: পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলা একাডেমীর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে এরকম একটা ধারণা থেকেই সম্ভবত অনেকে ‘রাখবো’ ও ‘শুনলো’ এর মতো বানান লেখেন যা দুটির কোনোটিই সমর্থন করে না।

আমরা যদি মনে করি ভাষার মতো বানানও নদীর গতিপথের মতো স্বেচ্ছাচারী এবং এই স্বেচ্ছাচার করা এই ভাষাভাষী জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার তাহলে আমাদের জন্য তা হবে অনেক বড় ভুল। প্রকৃত পক্ষে ভাষা নদীর গতিপথ ও স্রোতের মতো হলেও তার বানান অবশ্যই হতে হবে বিজ্ঞানের সূত্রবদ্ধ।

শব্দ রহস্যময় কোনো অলৌকিক পদার্থ নয় এটি একটি জাগতিক ব্যাপার এবং শব্দের বানান একটি জাগতিক অভ্যাস। পরী যদি পরি হয় তবে তার রূপ-মাধুরী কোনো পরিবর্তন ঘটবে না, কাহিনি বানানে ঈ-কার না হলেও তা ঘটনার বৃত্তান্তই বোঝাবে, শ্রেণি ঈ-কার না থাকলে তার অর্থ বিভাগ থাকবে-শুধু আমাদের জাগতিক অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন ঘটাবে। আমাদের বানানকে শৃঙ্খলা প্রদানের কাজ সহজ হবে।

সুতরাং বাংলার ভাষার একটি সংহত লিখিত রূপের জন্য আমাদের উচিত বানান বিষয়ক অপ্রয়োজনীয় সংস্কার ত্যাগ করা এবং নতুন বানান গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ ও উদ্যোগ নেওয়া। আমরা যদি আমাদের ভাষার লিখিত রূপকে সুসংহত করার প্রচেষ্টায় পিছিয়ে থাকি তবে এই প্রয়োজনকে অন্য কোনো জাতি এসে বাস্তবায়িত করবে না। অনেক সময় আমাদের পেরিয়ে গেছে-এভাবে আরও অনেক সময় পার করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু ভাষার লিখিত রূপকে সুসংহত করার জন্য আমাদের ধীর গতি প্রয়োজনের তুলনায় অতি বেশি ধীর। একটি ভাষাজাতি হিসেবে যে বিশৃঙ্খলা আমরা লালন করছি তা কেবল আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সমাধান হতে পারে।

যেহেতু বাংলা বানানের শৃঙ্খলা নির্ভর করছে আমাদের অভ্যাসের উপর-আমাদের সুসংহত বানান অভ্যাসই বাংলা ভাষার সুসংহত লিখিত রূপ। তাই বানানের বিষয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণা লব্ধ জ্ঞানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের মতানুসারে লিখন অভ্যাস গড়ে তোলাই আমাদের কর্তব্য। আমাদের বলতে সম্পূর্ণ বাঙালি জাতির।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০১০

শুদ্ধশব্দ বাংলা স্পেলচেকার বৃত্তান্ত

প্রারম্ভ কথা
বাংলা প্রকাশনা শিল্প সম্পূর্ণ কম্পিউটার নির্ভর হয়ে গেছে। শুধু প্রকাশনা শিল্পই নয় প্রায় সকল ধরনের বাংলা ব্যবহারকারীই ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের জন্য কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কারণ কম্পিউটার হলো সেই প্রযুক্তি যা আমাদের বাংলা প্রক্রিয়াকরণের কাজে বহু জটিলতার অবসান ঘটিয়েছে।
কম্পিউটার দিয়ে সহজে লেখা যায়। বিভিন্ন রকম ফন্ট ব্যবহার করা যায়। ফরম্যাটিং করা যায় ইচ্ছা মতো। এজন্য ওয়ার্ড প্রসেসরের সাথে ব্যবহার উপযোগী বেশ কিছু বাংলা কিবোর্ড ইন্টারফেস এবং ফন্টও পাওয়া যায়। কিন্তু এখনও একটা সমস্যা রয়েই গেছে যা আমাদের প্রকাশনা শিল্পের কাজের গতিকে করছে মারাত্মক রকম সময় ও শ্রম সাধ্য।প্রতিটি টাইপ করা ডকুমেন্টকেই ছাপার পূর্বে প্রুফ দেখে নিতে হয়। এমনিতেই বাংলা ভাষার বানান ধ্বনিমূলক নয় সাথে মানুষের হরেক রকম সীমাবদ্ধতা-সব মিলে বহু সময় ও শ্রম ব্যয়ের পরও নানা রকম ভুল। এই অবস্থার বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন ঘটতে পারে যদি গাণিতিকভাবে পরিশুদ্ধ কম্পিউটারকে আমরা এই কাজে ব্যবহার করতে পারি।
কম্পিউটার ভিত্তিক বানান পরীক্ষণ সময়ের সাশ্রয় ঘটাবে নাটকীয়ভাবে। একটি ৩০০ পৃষ্ঠার বই যার প্রুফ দেখতে কমপক্ষে দুই মাস প্রয়োজন হতো তা তিন থেকে পাঁচ দিনের ভেতর সম্ভব হবে। (সময়ের এই সাশ্রয়ের পরিমাণ কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে আরও অনেক বেশি।) তাছাড়া কম্পিউটারের পরীক্ষণ পরিশুদ্ধতা ত্র“টি-প্রবণ মানুষের দ্বারা কখনই সম্ভব নয়। কম্পিউটার দ্বারা সম্ভব হবে সকল আধুনিক বানানের পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রয়োগ এবং একমাত্র কম্পিউটার দ্বারাই সম্ভব একটি ডকুমেন্টের বানানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
বাংলা প্রকাশনার এই শূন্যতা পূরণের নিমিত্তেই শুদ্ধশব্দ ১.০ বাংলা স্পেলচেকার। বাংলা ভাষার লিখন পদ্ধতির সকল জটিলতা কাটিয়ে শুদ্ধশব্দ অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি সংবলিত বাংলা স্পেলচেকার। এটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডের সাথে। ফলে এখন থেকে প্রয়োজন হলেই কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে বানান সংশোধন করা যাবে যা বাঁচিয়ে দেবে ব্যবহারকারীর বহু মূল্যবান সময় এবং শ্রম।

শুদ্ধশব্দ বাংলা স্পেলচেকার:
স্পেলচেকার হলো এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের স্মৃতিতে রক্ষিত শব্দের অভিধান ব্যবহার করে শব্দের বানান পরীক্ষা করে। এখানে শব্দ বলতে বোঝায় একটি স্পেস বা যতিচিহ্ন থেকে আরেকটি যতিচিহ্নের মধ্যবর্তী অক্ষরের সমষ্টি। বাংলায় স্পেলচেকারকে শব্দবীক্ষণ যন্ত্রও বলা যেতে পারে। বানান পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্পেলচেকার যদি শব্দটি রক্ষিত বানান অভিধানে না পায় তবে শব্দটিকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে। স্পেলচেকারের আরেকটি কাজ হলো ভুল হিসেবে চিহ্নিত শব্দটির সম্ভাব্য সঠিক শব্দের পরামর্শ তালিকা তৈরি করা। এই পরামর্শ তালিকা তৈরি করতে স্পেলচেকার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, শব্দের সম্পাদনার দূরত্ব, ব্যবহারকৃত কিবোর্ড এবং ব্যাকরণসহ আরও অনেক বিষয়াদি বিবেচনা করে। পরামর্শের তালিকা প্রণয়নের পর সেগুলিকে আবার নৈকট্যের মাত্রা অনুসারে সাজায়। পরামর্শ তালিকা সাধারণত যথা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা হয়।

সংক্ষিপ্ত কার্যপ্রণালী
শুদ্ধশব্দ একটি বাংলা স্পেলচেকার। এটি মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডের অ্যাড-ইন হিসেবে ডেভালপ করা হয়েছে। এটি ইনস্টল করার পর মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডে দুটি বাটন তৈরি করে, যথা: ক) Bangla spelling খ) Mark Error Words। যে কোনো একটি বাটন ক্লিক করলেই স্পেলচেকারটি লোড হবে এবং কারসরের অবস্থান থেকে ডকুমেন্টের শেষ পর্যন্ত বানান পরীক্ষা করবে। প্রথম বাটনটি ক্লিক করলে স্পেলচেকার ডায়ালগ বক্স আসবে যা ভুল শব্দ পেলেই বানান পরীক্ষা বন্ধ করে দেবে এবং ভুল শব্দের জন্য সম্ভাব্য সঠিক শব্দের একটি পরামর্শ তালিকা তৈরি করবে। এরপর ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী ভুলশব্দটি সংশোধন করবে অথবা পরবর্তী ভুল শব্দটি অনুসন্ধান করবে। দ্বিতীয় বাটনটি ক্লিক করলে, স্পেলচেকারটি কারসর অবস্থান থেকে ডকুমেন্টের শেষ পর্যন্ত টাইপের ভুল হওয়া শব্দগুলিকে নীল এবং বানানের ভুল হওয়া শব্দগুলিকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করবে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. শব্দভাণ্ডার
শব্দভাণ্ডারটি প্রণীত হয়েছে সম্পূর্ণ আধুনিক বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে। এখানে রয়েছে ১, ০৬, ০০০ এরও বেশি শব্দ। যার ভেতর ৬৫, ০০০ ক্রিয়াপদ নয় এমন শব্দ, ৩৬, ০০০ ক্রিয়াপদ এবং ৫০০০ এরও বেশি অন্যান্য শব্দ রয়েছে।
২. মরফলজিকাল অ্যানালাইসিস
এঞ্জিন এই এঞ্জিনের সাহায্যে মাত্র ১, ০৬, ০০০ শব্দ দিয়েই বাংলা সম্ভব এমন কয়েকশো কোটি শব্দ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করতে পারে।
৩. টাইপ এরর ডিটেকশন এঞ্জিন
এই এঞ্জিনের মাধ্যমে সকল অবোধগম্য, রীতিবিরুদ্ধ এবং ভুল টাইপ ফেস যুক্ত বানান শনাক্ত এবং নিখুঁত পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
৪. সমাস ডিটেকশন এঞ্জিন
বাংলা শব্দে সমাসের ব্যবহার ব্যাপক এবং সৃষ্টিশীল হওয়ায় সকল সমাস শব্দ অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। এই এঞ্জিনের মাধ্যমে স্পেলচেকার স্পেসবিহীন শব্দসমূহ শনাক্ত করতে পারে এবং শব্দগুলিকে হাইফেন ও স্পেস দিয়ে পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
৫. সাজেশন এঞ্জিন
বাংলা ভাষার গঠন ও লেখনরীতি এমন যে কোনো একটি একটি বিষয় বিবেচনা করে সঠিক ভাবে পরামর্শ তৈরি করা সম্ভব নয়। যে এঞ্জিনগুলি পরামর্শ তালিকা তৈরি করার জন্য কাজ করে সেগুলি হলো:
  • এডিট ডিসটেন্স অ্যানালাইসিস এঞ্জিন যা ভুল শব্দের ভেতর ভুক্তি, বিচ্যুতি, প্রতিস্থাপন, স্থানান্তরসহ বিভিন্ন প্রকার ভুল শনাক্ত করতে পারে।
  • ফোনেটিক অ্যানালাইসিস এঞ্জিন ধ্বনিতাত্ত্বিক ভুল শনাক্ত করতে পারে এবং ধ্বনি বা উচ্চারণ অনুযায়ী সঠিক বানান খুঁজে বের করতে পারে।
  • কনজাংকট্ সিমুলেশন এঞ্জিনের সাহায্যে যুক্তাক্ষর প্রয়োগের ভুল শনাক্ত ও পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
  • গ্রামাটিকাল অ্যানালাইসিস এঞ্জিনের মাধ্যমে শব্দের বানানের ব্যাকরণগত ভুল শনাক্ত ও পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
  • সাজেশন কপ্লিমেন্ট এঞ্জিন যা উল্লিখিত এঞ্জিনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন ভুলগুলি শনাক্ত ও পরামর্শ প্রদান করে।
  • মরফলজিকাল সিমুলেশন এঞ্জিন যা দিয়ে শব্দভাণ্ডারের সীমার বাইরের শব্দও পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
  • সাজেশন প্রবাবিলিটি এঞ্জিন যা দিয়ে পরামর্শ তালিকাকে ভুলশব্দের নৈকট্য অনুসারে সাজাতে পারে।
৬. স্বয়ংক্রিয়শুদ্ধি
সকল টাইপ সংক্রান্ত ভুল স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুদ্ধকরতে পারে। স্বয়ংক্রিয়শুদ্ধি অভিধানের ২৫০০ এরও বেশি শব্দ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুদ্ধ করতে পারে। ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী আরও অনেক শব্দ স্বয়ংক্রিয়শুদ্ধি অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
৭. কাসটম ডিকশনারি
ব্যবহারকারী প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব শব্দের অভিধান তৈরি করতে পারবেন এবং তা মূল অভিধানের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারবেন।
৮. ফন্ট ম্যানেজমেন্ট এঞ্জিন
এই এঞ্জিনের সাহায্যে শুদ্ধশব্দ বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রায় যে কোনো ফন্টে ব্যবহার করা যাবে।

সাধারণ ব্যবহারকারীর সুবিধা:
  • সহজে ও দক্ষতার সাথে প্রুফরিডিং
  • মানবীয় ভুল থেকে মুক্তি
  • প্রচুর সময়ের সাশ্রয়
  • ভুল শব্দের জন্য অভিধান থেকে পরামর্শ
  • কয়েক হাজার শব্দের স্বয়ংক্রিয়শুদ্ধি
  • ব্যক্তিগত অভিধান ব্যবহারের সুবিধা
  • যে কোনো ফন্ট ব্যবহারের সুবিধা
  • ডকুমেন্টে বানান সংহতি নিশ্চিতকরণ
  • ডকুমেন্টে আধুনিক বানানের নিয়ম প্রয়োগ
  • সহজ ব্যবহার

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের সুবিধা:
  • স্পেলচেকার পাবলিকেশন্সের কাজে মানব নির্ভরশীলতা কমাবে
  • কর্মীদের প্রকাশনার কাজে আরও দক্ষ করে তুলবে
  • বাংলা টেক্সট প্রসেসিংয়ের কাজে কর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং সেই মূল্যবান অর্থ সাশ্রয় ঘটাবে
  • নির্ভুল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করবে
  • অত্যন্ত সহজ ইন্টারফেস এবং বহুল ব্যবহৃত ওয়ার্ড প্রসেসরে ব্যবহার করা যাবে বিধায় প্রশিক্ষণের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হবে না।

আধুনিক বাংলা বানানের প্রচলন ও কম্পিউটার প্রযুক্তি: একটি নতুন সম্ভাবনা

এক সময় ছাপানোর জন্য বাংলা বর্ণমালা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা ছিল। সমস্যা সমাধানকল্পে কেউ কেউ যুক্তাক্ষর ভেঙে লেখার মতো চেষ্টাও করেছিলেন তবে সেইসব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। কিন্তু কম্পিউটারে বাংলা বর্ণ প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা সৃষ্টির সাথে লিপি সংক্রান্ত অনেক জটিলতা খুব সহজেই সমাধান হয়ে গেছে। বানান সংক্রান্ত অসংহত এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা নিরসনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আমাদের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হতে পারে। কম্পিউটার মানুষের মতো বিজ্ঞ না হলেও সে গাণিতিক ক্রিয়ায় পরিশুদ্ধ এবং মানবিক ভুল মুক্ত।

মুদ্রণের কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার মুদ্রণ শিল্পে বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে। এখন ছাপার প্রিপ্রেস কাজের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। অর্থাৎ প্রতিটি মুদ্রিত কাগজই কম্পিউটার দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত। ছাপার প্রক্রিয়ার এই কম্পিউটার নির্ভরতা বাংলা বানানবিধি প্রয়োগের জন্যও একটি সুযোগ।

আমরা ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় কম্পিউটারে স্পেলচেকার ব্যবহার হতে দেখেছি। স্পেলচেকারে একটি শব্দভাণ্ডার থাকে যার সাথে সে প্রক্রিয়াকৃত প্রতিটি শব্দ মিলিয়ে দেখে। যদি শব্দটি শব্দভাণ্ডারে না থাকে তবে শব্দভাণ্ডার থেকে সম্ভাব্য শব্দের একটি পরামর্শ তালিকা তৈরি করে। ব্যবহারকারী এই পরামর্শ তালিকা থেকে বানানটি শুদ্ধ করতে পারেন অথবা পুনরায় টাইপ করতে পারেন অথবা বানানটি যেরূপ রয়েছে সেরূপ রেখে দিতে পারেন। এর ফলে ব্যবহারকারী প্রতিটি বানান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। বাংলা ভাষায় স্পেলচেকার দ্বারা আমরাও বানানের শুদ্ধতা নিরূপণের জন্য কম্পিউটারে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারি। আমরা যদি স্পেলচেকারকে একটি নির্দিষ্ট বানানবিধি অনুসারে উন্নয়ন করি তবে তা কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকৃত বাংলা ডকুমেন্টের সকল বানান একটি সুসংহত রূপে নিয়ে আসতে পারবে। ফলে মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে বানানের নিয়ম রক্ষা করে মুদ্রণকার্য সম্পন্ন করার যে অসুবিধা রয়েছে তা আর থাকবে না। অর্থাৎ টাইপসেটিংয়ের সংক্রান্ত সমস্যার মতো মুদ্রণের সময় বানান নিয়ে আমাদের যে ব্যাপক অসুবিধা রয়েছে সেটাও কম্পিউটারের সাহায্যে দূরীভূত করা যাবে বলে আশা করা যায়।

বানানবিধি প্রণয়ন অপেক্ষা বানানের বিধানসমূহ সকলকে দিয়ে ব্যবহার করানোটাই সবচে বড় অসুবিধা। আমাদের প্রথমেই খুঁটিয়ে দেখতে হবে বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অসুবিধার মূল কারণসমূহ। প্রণীত বানানবিধি মানা হয় না কারণ আমরা সকলেই বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বানানের বিধানটি অধ্যয়ন করার মতো সময় ও সুযোগ করতে পারি না। বানানবিধিতে যে নিয়মগুলি উল্লেখ থাকে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে কোন শব্দের বানান কীরূপ হবে তা নির্ধারণ করা সহজ নয়। ফলে বানান বিধান অধ্যয়ন করেও যে আমরা সঠিকভাবে বানান লিখতে পারব তা নয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় অভিধান খুলে দেখাটাও আমাদের জন্য অসুবিধাজনক । বিধায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা যা জানি যা বুঝি তাই লিখে উদ্ধার হতে চাই। অর্থাৎ সমস্যার মূলে হলো প্রণীত বানানের বিধান ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে সহজ কোনো উপায় নেই। যার ফলে ইচ্ছে করলেই আমরা আধুনিক বানানবিধি অনুসারে লিখতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের বানান বিষয়ক সংস্কারের বিষয়টি বাদ দিলাম কারণ বানান সংক্রান্ত সংস্কার সৃষ্টি হয় ভূত সংক্রান্ত সংস্কারের মতো অপরজনের কারণে।

বানান সংক্রান্ত অভ্যাস গড়ে ওঠার বড় নিয়ন্ত্রক হলো পাঠ্যবই, সংবাদপত্র, বিভিন্নরকমের বই ও মুদ্রিত কাগজপত্র। এই সব ছাপার কাজে একটি আধুনিক বানানের বিধান অনুসারে স্পেলচেকার ব্যবহার হয় তবে আধুনিক বাংলা বানানবিধি প্রয়োগের জন্য খুব সহজ একটি উপায় হবে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ যে ভাষাবিজ্ঞানিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রণয়নকৃত আধুনিক বানান পদ্ধতির প্রতি অশ্রদ্ধাশীল তা - সমস্যা হচ্ছে এই পদ্ধতি প্রয়োগের সহজ উপায়। অধিকাংশ মুদ্রিত কাগজপত্রে যদি বানানবিধির প্রয়োগ ঘটে তবে বানানবিধির বানানগুলির সাথে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ক্রমে চোখে দেখা বানানগুলি কলম দিয়ে লিখতেও শুরু করবে এবং পুরোনো বানানগুলিকে ভুল বলে প্রতিভাত হবে। ভাষাবিজ্ঞানিরা তখন আমাদের জন্য আরও প্রয়োজনীয় কিছু ভাবার অবসর এবং সাহস পাবেন।

স্পেলচেকার প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার আধুনিক বাংলা বানানবিধির পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রয়োগ নিশ্চিত করে আমাদের বাংলা বানানকে একটি সুসংহত রূপ প্রদানে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।